বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পর্যটক সামলাতে দেয়াল তুলছে জাপান ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, একাদশে যারা আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়নি: ওবায়দুল কাদের অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে : সিইসি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ

১৭ অপরাধে রোহিঙ্গারা

স্বদেশ ডেস্ক:

কক্সবাজার ও পাশের জেলাগুলোর আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র উঠে এসেছে। গড়ে তুলেছে ছোট ছোট সন্ত্রাসী বাহিনী। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকা। বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা টেকনাফে এক যুবলীগ নেতাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গারা খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, ইয়াবা-মানবপাচার, নির্যাতন, ফসলি জমি দখলসহ ১৭ ধরনের অপরাধে জড়িত। কিন্তু ক্যাম্পগুলো ঘিঞ্জি হওয়ায় অভিযান পরিচালনায় বেগ পেতে হয়। এ সুযোগে রোহিঙ্গাদের মধ্যে থাকা অন্তত ১৪টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্যাম্প বদল বা পলায়নের সুযোগসহ অদূরবর্তী পাহাড়ে ঘাপটি মেরে থাকে।

রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা এক রকম আতঙ্কে আছেন। স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো রাতের বেলা অরক্ষিত থাকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ডাকাতিসহ অপরাধ কর্মকা-ের সুযোগ পায়। আর রোহিঙ্গাদের দিয়ে মানবপাচার বা ইয়াবা পাচারের মূল হোতা স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস-বিস) মহাপরিচালক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বিশ্বব্যাপীই শরণার্থীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তারা মানবপাচার, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ করে থাকে। আবার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যরা এদের আর্থিক প্রলোভন বা মোটিভেট করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটা ভিন্ন সেটা হলো এরা ইয়াবা কারবারেও জড়িত। কারণ এদের উৎস দেশ (মিয়ানমার) এবং ক্যাম্পগুলো মাদক চোরাচালান রুটের খুব কাছাকাছি। তাই এদের অপরাধ পুরোপুরি দমন করা সম্ভব না হলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

গত দুই বছরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ৪৩ জন খুন হয়েছেন। বেশিরভাগ হত্যা-খুনের নেপথ্যে অপহরণ, ডাকাতি, পাচার, ক্যাম্পের নেতৃত্ব (মাঝি-চেয়ারম্যান) নির্বাচন, প্রভাব বিস্তার থেকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও ঘটছে। এসব খুনোখুনির ৪৩টি মামলায় ১৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের অনেকেই পলাতক।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত ৪৭১ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ রোহিঙ্গাকে। উখিয়া ও টেকনাফ থানায় দায়ের মামলাগুলোর মধ্যে ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালানের ২০৮টি মামলায় আসামি করা হয় ৩৬৮ জনকে। এসব মামলার বাদী হয়েছেন রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের সংখ্যা নগণ্য হলেও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এগিয়ে কক্সবাজার পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহন হন ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. ওমর ফারুক। ওই ঘটনার পরের রাতে জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পঘেঁষা পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মোহাম্মদ শাহ ও মো. শুক্কুর নামে দুই রোহিঙ্গা। পুলিশ বলছে, নিহতরা ওমর ফারুক হত্যা মামলার আসামি এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই বছরে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩২ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। তারা হত্যাকা- বা মাদক পাচারের মামলার আসামি ছিল।

উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর বলেন, ছোটখাটো অপরাধের ঘটনা ক্যাম্পেই মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) বা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়। তবে ফৌজদারি অপরাধের যেসব অভিযোগ থানায় করা হয় সবকটিতে পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা স্থানীয় ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে। এদের ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবার বাহক বা সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আসা রোহিঙ্গারা।

টেকনাফ-উখিয়ার বাসিন্দারা বলছেন, ছাগল-মুরগি, মোবাইল ফোন চুরি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই রোহিঙ্গারা করছে না। ফসলি জমি, ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি নষ্ট করছে তারা। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী-রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আবার শ্রম বাজারে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, এনজিওরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাসেবী নামে তুলনামূলক কম বেতন/চুক্তিভিত্তিক শ্রমে খাটাচ্ছে। গত দুই বছরে হঠাৎ করে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় কিছু সংখ্যক মানুষ লাভবান হলেও বিপাকে স্থানীয় বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী।

গত বছরের ২০ আগস্ট প্রকাশিত বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের এক গবেষণায় উঠে আসে রোহিঙ্গাদের কারণে ৪৩ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠী বহুমাত্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আইনশৃঙ্খলাসহ স্থানীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে।

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনসহ ছোট-বড় অপরাধ নিত্যনৈমিত্তিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, পরিবারের ভেতর এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা ‘ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ’ থেকে ঘটনাগুলো চেপে রাখেন।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য মতে, বাংলাদেশে এসে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৫ বছর। তাদের অনেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের মগ দোসরদের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন। এসব ঘটনায় নারীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার পরিচালিত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি), সীমান্তবিহীন চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারসের (এমএসএফ) কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যৌন নির্যাতনের বড় কারণ নিরাপত্তাহীনতা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877